Thursday, November 19, 2015

শুভ জন্মদিনে

এদিন আমার সেই সাধারণ নয় 
সবার মতোই বাড়লো বছর এক ,
কার্ত্তিক তার শেষ কাঠিটা ছোঁয় 
অঘ্রাণ বলে আমায় চেয়ে দেখ |

নতুন ধানের বহর ওঠে ক্ষেতে 
নবান্নে তার প্রাণের কাঠি খানি ,
আমি শুধু মাতছি আনন্দেতে 
শুভেচ্ছাতে ভরেছে মোর দানি |

কার যেন এক চিঠি এলো হাতে 
বুক ভরে তার গন্ধ নিলেম প্রাণে ,
কথা ছিল থাকব যে তার সাথে 
বলব কথা ছড়ায় গানে গানে|

যতনে সে সাজায় উপহার 
আধেক তারই রইলো সেথায় পড়ে ,
ভালবাসায় হলেম আমি ভার 
পা বাড়ালাম তেইশতম ঘরে |

কাছে পিঠে পেলেম সকল সব-এ 
কাছের সকল মুখের পানেই চায় ,  
ফিরব ঘরে আবার যেন কবে 
হবে দেখা আমি অপেক্ষায় ||

_______________________________________________________________________

২৩তম জন্মদিনে 



Tuesday, October 6, 2015

আনমনা

সেদিন যখন বিকেল বেড়ে আঁধার গেল ছেয়ে
আমি তখন গেলেম আমার নীল সরণী বেয়ে
সে পথ গেছে কোথায় সুদূর নেই যে তাহার শেষ
দুপাশ তারই যায় না দেখা শুকনো পাতার দেশ
অন্ধ হয়ে চলছি ছুটে শুনছি কারই সুর
বাড়ছে আঁধার বাড়ছে সে টান সুর যে সুমধুর
গন্ধ আসে মন মাতানো কেমন যেন চেনা
ঠিক চিনেছি এর সাথে তো আমার লেনাদেনা
বিধঁলে কাঁটা পায়ের তলে ক্লান্তি এসে ধরে
গন্ধ হলো তীব্র, সে সুর থামল পথের পরে
নরম শীতল শান্ত প্রলেপ নামলে এসে শিরে
ফিরে এলো রং-এর খাতা আঁধার গেল সরে |

চিঠি-কান্ড

সরকারী চাকুরি, পদবীও তাই 
ছেলে তার বড় ভালো, কোনো জ্বালা নাই 
পড়াশোনা করে ভালো, বেয়াদবি নেই
ভর্তি হয়েছে সে নরেন্দ্রপুরেতেই 
মাসে মাসে দুটো দিনে, দেখার সময় 
তাতেও মায়ের মনে দ্বিধা রয়ে যায় 
ছেলে যেন পড়াশোনা করে ঠিকমতো
চিন্তায় কাটে দিন এখনো সে ছোট
হপ্তায় খান দুই চিঠি দেওয়া চাই
একখান বাবাকে, একখান মা'য় 
চলছিল বেশ ভালো আনন্দে থাকা 
শয়তানি বুদ্ধিতে মাথা তার ঢাকা 
ভিসিটিং-এ একদিন খেল বেশ বকা 
দুষ্টুমি কী এক করেছে যে খোকা 
সোমবারে বসে বসে লিখল সে পত্র
হাসপাতালেতে সে গেড়েছে যে ছত্র 
বাড়ি বয়ে এলো চিঠি শুক্কুরবারে 
বাবার কপালে চোখ চিঠিখানা পড়ে 
ভবনের মহারাজে করলেন ফোন
জিঘালেন ছেলে তার আছে সে কেমন 
মহারাজ অবাক হয়ে - "কিছু হয়নি তো তার ?"
দিব্যি আছে সে ছেলে হুল্লোড়ে মাতোয়ার 
মনে মনে বেশ রেগে ফোন রাখলেন
"ঠিক আছে তো ছেলে আমার?",মা যে শুধোলেন 
বললেন বাবা - ছেলে হয়েছে কি গুণী !
কি লিখেছে চিঠিতে সে তাই আগে শুনি
ছেলে তার শিখেছে যে শয়তানি কথা 
লিখেছিল চিঠিতে কিডনিতে ব্যথা |
_________________________________________________

Saturday, September 26, 2015

লোডশেডিং

ছুটির দিনে ছেলেরা সব 
ভলি খেলায় মগ্ন
বাজলে পরে সাতটা সাড়ে 
শুরু খাওয়ার লগ্ন ||

খিদের চোটে ছুটল সবাই 
ভিড় বাড়ালো মেস-এ 
নিরামিষে আলুর ঘ্যাঁট আর 
রুটি-ডাল একপেশে || 

আমিষেতে ডেকচি ভরা 
বিরিয়ানি দেখে 
কেউ বা বলে ঠোঁটটা চেটে 
একটু দেখি চেখে ||

শুরু হলো চেচামেচি  
মাংস নাকি ছোট 
 কারো হাতে একটা থালা 
কারো হাতে দুটো ||

হঠাত হলো অন্ধকার 
দেদার ছোটাছুটি 
যাচ্ছে না যে কিছুই দেখা 
চলছে ভাজা রুটি ||

মোমবাতিটা জ্বালিয়ে পরে
চক্ষু ছানাবড়া  
বিরিয়ানি আছে পড়ে
মাংসগুলো ছাড়া !

উৎস : গুগল ইমেজস 

Friday, September 18, 2015

স্বপ্ন

নতুন আলাপ নতুন কথা 
নতুন লাগে সব 
নতুনভাবে বাঁচতে চেয়ে
উঠলো ফুটে রব ||

ভোরের আলো নতুন রঙে 
নতুনভাবে আসে
এক মুহূর্ত চলবে না যে 
খুব থাকা চায় পাশে ||

কথা দিয়ে বুনে ফেলে
কথার মায়াজাল 
গুনগুনিয়ে গানের সুরে 
করছে হরতাল ||

ভারাক্রান্ত মনের কথা 
বেরোয় একে একে 
নতুন চোখে সত্যি ভেবে 
অবাক চোখে দেখে ||

ঘুম ভেঙ্গে যায় চমকে উঠে 
ঝোড়ো হাওয়া বয় 
চোখের পাতা ভিজলো খানিক 
পাশ ফিরে সে শোয় ||

Tuesday, September 15, 2015

সোঁদা মাটির গন্ধ

তখন সবে বেরিয়েছি যে পরীক্ষা হল ছেড়ে
বাইরে আঁধার ঘনঘটা মেঘ এসেছে তেড়ে 
হাওয়ার সাথে তাল ঠুকে সে উঠছে ভীষণ নেচে 
পেখম মেলে পথের মাঝে ময়ূর হেঁটে গেছে 
সবাই তখন আনন্দেতে করছে গুঞ্জন 
বৃষ্টি এবার আসবে ঝেঁপে ভিজবে তনু-মন 

ঘরে ফিরি পা চালিয়ে ভিজব দুহাত ভরে
উড়ছে ধূলো উড়ছে পাতা সমীরণের ঘোরে 
দু এক ফোঁটা ততক্ষণে ঝরা হলো শুরু 
বাজের তখন ভীষণ দাপট বুকটা দুরু দুরু 
কেউ বা ছাতা খুলল ভেবে ভিজবে না সে জলে 
ঝোড়ো হাওয়া ওড়ালো সে ছাতা নিজের বল-এ 

ভিজব বলে ঘর থেকে বেরিয়েছি যেমনি 
মেঘ যে গেল সরে, দিয়ে ভীষণ কাঁপুনি  
অবাক চোখে চেয়ে দেখি মেঘ পালালো ছুটে 
মিঠে রোদের হাসি আবার উঠলো মুখে ফুটে  
তারপরেতে বৃষ্টি-বাতাস সবই হলো বন্ধ 
পাওনা বলতে একটুখানি সোঁদা মাটির গন্ধ ||


ছবি : হোস্টেল ১ , আই. আই. টি. কানপুর

আমার খুব পছন্দের গান রইলো |

কিছু শব্দ

কিছু শব্দ ভালবাসায় ভরা 
কিছু শব্দ হৃদয় দিয়ে বাঁধে 
কিছু শব্দ বারে বারে পড়া
কিছু শব্দ চোখের জলে কাঁদে ||

কিছু শব্দ বোঝায় অনেক কথা
কিছু শব্দ সবার মুখে মুখে
কিছু শব্দে প্রাণের শত ব্যথা 
কিছু শব্দ কান্নাভেজা চোখে ||

কিছু শব্দ সিলিং থেকে ঝোলে 
কিছু শব্দ অন্ধকারের কোণে
কিছু শব্দ মনের যে দ্বার খোলে
কিছু শব্দ আটকে থাকে ফোনে ||

কিছু শব্দে চিঠি চালাচালি 
কিছু শব্দে নতুন জীবনদান 
কিছু শব্দে ভরে পাতার ডালি 
কিছু শব্দ জেগে ওঠে প্রাণ ||

কিছু শব্দ সবার জন্য নয় 
কিছু শব্দে আঁতকে ওঠে বুক 
কিছু শব্দে মনের মাঝে ভয় 
কিছু শব্দে মনে পড়ে মুখ ||

কিছু শব্দ প্রিয়জনের মাঝে 
কিছু শব্দ স্বপ্নে আসে ফিরে
কিছু শব্দ প্রিয়জনে খোঁজে
কিছু শব্দ ঢেউ জাগায় তীরে ||

কিছু শব্দ ফিরিয়ে নিতে চায় 
কিছু শব্দে ওলটপালট মন 
কিছু শব্দে থাকবে না যে সায় 
কিছু শব্দ চাইছে মনের কোণ ||

Sunday, September 13, 2015

মামণির জন্মদিন

মামণির জন্মদিনে রইলো অনেক শুভেচ্ছা আর ছোট্ট নিবেদন:
পাকামির জন্য আমার ডাকনাম হয়েছে "জেঠু" |



মায়ের হাসি ভালোবাসি 
ভালোবাসি খেতে
মায়ের মত মামণিও 
আছে আঁচল পেতে |

দেখা হলে বলবে হেসে
হংস-বাবু কই
হংস-জেঠুর কঠোর জবাব 
পড়ছি বসে বই |

তোমার জন্য রেঁধেছি যে 
চিংড়ি মালাইকারী 
চিকেন আছে, পোলাও আছে 
বিরিয়ানির হাঁড়ি |

দিদিভাই পাশেই দাঁড়ায় 
চেয়ে থাকে পাতে 
বলে বাবু পেট খারাপে
ছুটবে গাড়ু হাতে |

মামণি তাই ধমকে ওঠে 
ও কি ও কি বাবু 
বাড়ি গিয়ে খুব পেটাবো 
খাবে দুধ-সাবু |

পাশে থেকে অভিরুদা 
ধমকে উঠে বলে
দুধ-সাবু নয় ,দুধ-সাবু নয় 
পেট ভরাবে জল-এ |



Saturday, August 15, 2015

নরেন্দ্রপুর জীবন


মাঝে মাঝেই পুরনো কথা মনে পড়লে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেখানে | কিন্তু যখন সে উপায় থাকে না, তখন অন্যভাবেই ফিরে দেখি, সকলকে দেখাই আমাদের এক সুতোই গাঁথা জীবনশৈলী - যার একটা নাম আছে নরেন্দ্রপুর | 


|| নরেন্দ্রপুর জীবন ||

নরেন্দ্রপুর বাবা মায়ের স্বপ্ন দেখার ঘর,
ছোট বড় থাকে সাথে কেউ নয় যে পর |
নরেন্দ্রপুর অন্য জগৎ নতুন জীবন শুরু,
একই সাথে কান্না-হাসি ছাত্র-শিক্ষাগুরু |

নরেন্দ্রপুর প্রথম গেলে বিদ্যার্থী ব্রত,
নতুন গীতা,নতুন ধুতি, পাঞ্জাবিটা ছোট |
নরেন্দ্রপুর ফুলের বাগান ফুলের ঝুরি হাতে,
দশটা মানেই নিভলো বাতি ঘুমিয়ে পড়া রাতে |


নরেন্দ্রপুর প্রথম প্রথম প্রণাম করার ঘটা,
বয়সটুকু বাড়লে খানিক ঝোপে ঝাড়ে ছোটা |
নরেন্দ্রপুর সকাল সন্ধে দুবার পূজা পাঠ,
ফুটবল আর ক্রিকেট খেলা সবুজ ঘাসের মাঠ |


নরেন্দ্রপুর কানে বাজে "উসুল করে খাবি"
হরেকরকম খাবার এমন আর কি কোথাও পাবি !
নরেন্দ্রপুর আম কাঁঠাল আর জামরুলের সারি,
চটি হাতে জামরুল নয় আর একপাটি পাড়ি |


নরেন্দ্রপুর পুকুরধারে বাঁশবাগানের ভূত,
ফুলে ভরা রঙিন বাগান নেইকো মালীর খুঁত |
নরেন্দ্রপুর স্কুলের পাশে রাজহংসের ডাক,
খরগোশ, মাছ, কচ্ছপ আর নানা পাখির ঝাঁক |


নরেন্দ্রপুর রাতের বেলা গোল্ঘরেতে ঘন্টা,
পড়লে মনে মায়ের কথা কেঁদে ওঠে মনটা |
নরেন্দ্রপুর শয়তানিতে আছে সাজা-শাস্তি !
মারটি খেলে রাতের বেলা বরাদ্দ যে মিষ্টি |


নরেন্দ্রপুর নটা দশে আসেম্বলি হল,
দেরী মানে নীল ডাউন দুষ্টু ছেলের দল |
নরেন্দ্রপুর বৃষ্টি দিনে কিটো পড়ে স্কুল,
বিকেল হলেই জল কাদাতে ফুটবলে মশগুল |


নরেন্দ্রপুর স্টাডি টাইম রিক্সা বাজায় ভেপু ,
পেনটি হাতে ছোটা শুরু বিচ্ছু থেকে ডেপো |
নরেন্দ্রপুর পেটখারাপে রুগীর ঝোলের থালা,
পেটের ব্যথায় ক্রেপ ব্যান্ডেজ এ যে ভীষণ জ্বালা |

....to be continued


Tuesday, August 11, 2015

তোমার সাথে

তোমায় নিয়ে পদ্য লিখব, তোমায় নিয়ে গল্প
মনে ধরি ভালবাসা 'লেখা'টাতে অল্প
তোমায় আমি গান শোনাব, আধুনিক আর রবি
খাতায় কেটো আঁকিবুকি মনে এঁকো ছবি
তোমার সাথে ঘুরে ঘুরে চষব কলকাতা
বৃষ্টি দিনে বৃষ্টি ভেজা রোদের দিনে ছাতা
তোমার সাথে কফি হাউস প্লেট ভরা চাউমিন
দু পা হেঁটে ব্যথায় তোমার পা করে চিনচিন
তোমার সাথে কুমোরটুলি, পুজো তোমার সাথে
মেলায় গিয়ে আড়াই প্যাঁচের জিলিপিটা হাতে
তোমার সাথে ময়দানেতে লেবু চা এর কাপ
সময় আর ভালবাসার রাখছি নাকো মাপ
তোমার সাথে সিমেট্রি আর কলেজ স্ট্রিটের মোড়
লুকোচুরি থাকবে আর খুলবো হাজার দোর

তোমার সাথে গানের লড়াই, আর যত সব খেলা 
তোমার সাথেই ঘর সাজানো,গড়িয়ে যে যায় বেলা
তোমার সাথেই সন্ধ্যাপ্রদীপ , আরতির ধুনো ধূপ 
চোখে চোখে চেয়ে থাকি, মুখটি করে চুপ |
তোমার সাথে গল্পে মাতি হয় না কথা শেষ 
বেশ মনে হয় তুমিই যেন "সব পেয়েছির দেশ" |

কালবোশেখী

ভর দুপুরে ঘুম ভাঙ্গে যেই তড়াক করে উঠি
ঝড় উঠেছে তাই বলে সব করছে ছোটাছুটি
কারোর হাতে ঝুড়ি কেউ ছোট থলে হাতে
পড়বে ঝরে আম লিচু সব কুড়িয়ে নেবে তাতে 
ছোট্ট শিশু ছুট্টে চলে হাতের মুঠোই ভরসা
মেঘ ছেয়েছে কালবোশেখীর এ যেন সেই বর্ষা 
বাঁশ ঝাড়টা এপাশ ওপাশ পেন্ডুলামের মত
দুলছে তারা হাওয়ার সাথে আনন্দ তার কত !!
মাঝিরা সব নৌকোগুলো ভিড়িয়ে নিলে ঘাটে
জাল গুটিয়ে জেলের দল ছুট লাগালো বাটে
বাবুই পাখির বাসাগুলো তালগাছেতে লেগে
হালকা তবু উড়ছে নাকো বইছে হওয়া বেগে
শাড়ি কাপড় তুলতে গিয়ে গিন্নি হলো পাগল 
একটা তারই মাটির ওপর বিছিয়ে শুয়ে ছাগল 
হঠাত্ করে বৃষ্টি এলো ছেয়ে মুষলধারে
বাচ্চা সাথে হাঁসগুলো সব ঢুকলো ছুটে ঘরে ||

Monday, August 10, 2015

CMI

উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ক্লাস ১২ শেষ করে যখন হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি ফিরলাম | তখনও জানি না এরপর কোথায় যাব , কি নিয়ে পড়াশোনা করব , সামনের দিনগুলো কেমন হবে ! ডায়েরিতে সবাইকে দিয়ে "বিদায়ী"( বিদায় জানাবার সাথে সাথে একে অপরের জন্য কিছু কিছু লিখে দেওয়া ) লিখিয়ে , স্কুলের জামায় ওপর থেকে নিচে ভরাট করে সবাইকে দিয়ে ছবি আঁকিয়ে , বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে সব স্মৃতি সাথে করে বাড়ি ফিরেছি | এরই মধ্যে CMI(Chennai Mathematical Institute)- এর প্রবেশিকা পরীক্ষার সিট্ পড়ল সেই নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনেরই কলেজে |
মোটামুটি আশা রেখেছিলাম যে আমি অর্ধেকের বেশি প্রশ্নের উত্তর করতে পারব না | হলোও তাই | কিন্তু তিন ঘন্টা সময় কাটাব কি করে সেটা ভেবে উঠতে পারছিলাম না | আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম ওই হল-এ আমি একা ওরকম নেই | সবাই একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে | হঠাত ভাবলাম একটা কবিতা লিখে ফেললে কেমন হয় | যেমনি ভাবা তেমনি কাজ | কিন্তু পাতা ছিল না লেখার | তাই আডমিট কার্ডের পেছনেই লেখা শুরু করলাম |

কাটে না সময় শুধু পাখার আওয়াজ 
কেউ কেউ একমনে করে চলে কাজ 
চশমাটা খুলে কেউ বড় হাই তোলে 
জানালার পর্দারা একমনে দোলে 
সেদিকে তাকিয়ে থাকে উদাস দু-চোখ 
কেউ বলে - "স্যার নেই তাড়াতাড়ি টোক |"

কোশ্চেন পড়ে কেউ করে হুশহাশ 
কেউ বা গুনছে পাখি পেয়ে অবকাশ 
কেউ বা জখম পেয়ে অঙ্কের আঘাত 
টিচারের ঘুম-চোখ পেত যদি খাট 
কেউ পেন কামড়ায় কেউ আঁকে ছবি 
অঙ্ক করতে এসে কেউ হলো কবি 

কাটে না সময় চলে ঘড়ির কাঁটা 
স্তব্ধ সবার মুখে কুলুপ আটা 
অসহ্য গরম এখন ক্লান্ত সবাই 
ঘন্টা জানালো - শেষ হলো CMI ||


Sunday, August 9, 2015

যাওয়া - আসা


চল আজ তোকে একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যাব-
যেখানে আমার শৈশবের কয়েকটা বছর কাটিয়েছি 
আসলে হঠাত্ আজ তোকে দেখেই
মনে পড়ে গেল আমার ছেলেবেলার কথা 
জানিস, সেখানে একটা বড় বটগাছ ছিল !
আর আমরা,
বটগাছের ঝুরিগুলোকে বেঁধে দোলনা মত বানিয়ে 
তাতে চেপেই খেলা করতাম
এখনকার মত তখন তো আর পার্ক ছিল না
আর যত রাজ্যের পাখি
সব মনে হয় ওই গাছেই আশ্রয় নিয়েছিল |
আর দেখতাম ,
যত বুড়োদের আড্ডা , ওই গাছতলাতেই..
পাশে একটা চায়ের দোকানও ছিল |

চল চল ,
আজ বরঞ্চ ওখান থেকেই একটু বেরিয়ে আসি 
চায়ের দোকানটা থাকলে একটু চা খাওয়াও হবে |

দুজনের মনেই কৌতুহল , তবে আলাদা ধরনের 
একজনের কৌতুহল নতুন একটা জায়গা দেখার, যেখানে 
তার বাবার ছেলেবেলা কেটেছে ;
আর একজনের কৌতুহল 
সে কি আবার তার শৈশবকে ফিরে পাবে !

কিন্তু বটগাছটা গেল কোথায় !!
এতো আর 'মানুষ-জানোয়ার' নয়, যে উবে যাবে !

চল, ওই পাশের চায়ের দোকানটা তো আছে 
ওখানেই জিজ্ঞাসা করি |

-- আচ্ছা দাদা, এখানে যে একটা খুব বড় বটগাছ ছিল,
সেটা কোথায় ? আমি কি পথ ভুল করেছি ?
-- না না , এই যে বড় বাড়িটা দেখছেন 
এইখানেই তো ছিল,
বিশ বছর হয়ে গেল - ওই গাছটা কেটে ফেলে এই বাড়িটা
ওর জায়গা দখল করেছে |

ওহ, আমার তবে ভুল হয়েছে ,
কিন্তু চোখের ভুল নয়, বোঝার ভুল 
সত্যিই, কত স্মৃতি জড়িয়ে ছিল এখানে 
কিন্তু মানুষের নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় -
একটা গাছ তো কখনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না !
একটা কেন, স-অ-ব বাধাকেই সে দুরে সরিয়ে দিতে চায় |

কিন্তু আমার বিশ্বাস-
একদিন এই শৈশব আবার ফিরে আসবেই 
হয়তো তখন আমি থাকব না 
থাকবে আমার শৈশব 
কারো যৌবন , কারো বার্ধক্য 
চা খাওয়া আর হলো না 
বাড়িতেই ফিরে এলাম |

কয়েকবছর পর,
একদিন সন্ধ্যাবেলা ওই রাস্তা দিয়েই বাড়ি ফিরছিলাম |
চারিদিকে আঁধার নেমে গেছে 
হঠাত্ আমার শৈশব এর দখল নেওয়া বাড়িটায় 
চোখ পড়তেই দেখলাম -
বাড়িটার বাইরের দেয়াল থেকে সিমেন্ট বালি
খসে খসে পড়েছে 
যেন গাছের কষ্টটা তাকেই অনুভব করতে হচ্ছে 
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম বাড়িটাকে |

রাত বাড়ছে 
আর বেশিক্ষণ নয়
ওই বাড়ির রাতও শেষ হয়ে যাবে 
ভোর আসতে বেশী দেরী নেই 
আর বাড়ির দেয়ালে আমি 
ভোরের আলোটা দেখতে পেলাম 
দেখলাম,
ইট-বালির কংক্রিট ফাটিয়ে 
ছোট্ট একটা বট এর চারা মাথা তুলেছে |

নিশ্চিন্ত মনে ভাবলাম 
দোকানটা তো এখনও খোলা আছে 
এক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে ||