চল আজ তোকে একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যাব-
যেখানে আমার শৈশবের কয়েকটা বছর কাটিয়েছি
আসলে হঠাত্ আজ তোকে দেখেই
মনে পড়ে গেল আমার ছেলেবেলার কথা
জানিস, সেখানে একটা বড় বটগাছ ছিল !
আর আমরা,
বটগাছের ঝুরিগুলোকে বেঁধে দোলনা মত বানিয়ে
তাতে চেপেই খেলা করতাম
এখনকার মত তখন তো আর পার্ক ছিল না
আর যত রাজ্যের পাখি
সব মনে হয় ওই গাছেই আশ্রয় নিয়েছিল |
আর দেখতাম ,
যত বুড়োদের আড্ডা , ওই গাছতলাতেই..
পাশে একটা চায়ের দোকানও ছিল |
চল চল ,
আজ বরঞ্চ ওখান থেকেই একটু বেরিয়ে আসি
চায়ের দোকানটা থাকলে একটু চা খাওয়াও হবে |
দুজনের মনেই কৌতুহল , তবে আলাদা ধরনের
একজনের কৌতুহল নতুন একটা জায়গা দেখার, যেখানে
তার বাবার ছেলেবেলা কেটেছে ;
আর একজনের কৌতুহল
সে কি আবার তার শৈশবকে ফিরে পাবে !
কিন্তু বটগাছটা গেল কোথায় !!
এতো আর 'মানুষ-জানোয়ার' নয়, যে উবে যাবে !
চল, ওই পাশের চায়ের দোকানটা তো আছে
ওখানেই জিজ্ঞাসা করি |
-- আচ্ছা দাদা, এখানে যে একটা খুব বড় বটগাছ ছিল,
সেটা কোথায় ? আমি কি পথ ভুল করেছি ?
-- না না , এই যে বড় বাড়িটা দেখছেন
এইখানেই তো ছিল,
বিশ বছর হয়ে গেল - ওই গাছটা কেটে ফেলে এই বাড়িটা
ওর জায়গা দখল করেছে |
ওহ, আমার তবে ভুল হয়েছে ,
কিন্তু চোখের ভুল নয়, বোঝার ভুল
সত্যিই, কত স্মৃতি জড়িয়ে ছিল এখানে
কিন্তু মানুষের নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় -
একটা গাছ তো কখনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না !
একটা কেন, স-অ-ব বাধাকেই সে দুরে সরিয়ে দিতে চায় |
কিন্তু আমার বিশ্বাস-
একদিন এই শৈশব আবার ফিরে আসবেই
হয়তো তখন আমি থাকব না
থাকবে আমার শৈশব
কারো যৌবন , কারো বার্ধক্য
চা খাওয়া আর হলো না
বাড়িতেই ফিরে এলাম |
কয়েকবছর পর,
একদিন সন্ধ্যাবেলা ওই রাস্তা দিয়েই বাড়ি ফিরছিলাম |
চারিদিকে আঁধার নেমে গেছে
হঠাত্ আমার শৈশব এর দখল নেওয়া বাড়িটায়
চোখ পড়তেই দেখলাম -
বাড়িটার বাইরের দেয়াল থেকে সিমেন্ট বালি
খসে খসে পড়েছে
যেন গাছের কষ্টটা তাকেই অনুভব করতে হচ্ছে
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম বাড়িটাকে |
রাত বাড়ছে
আর বেশিক্ষণ নয়
ওই বাড়ির রাতও শেষ হয়ে যাবে
ভোর আসতে বেশী দেরী নেই
আর বাড়ির দেয়ালে আমি
ভোরের আলোটা দেখতে পেলাম
দেখলাম,
ইট-বালির কংক্রিট ফাটিয়ে
ছোট্ট একটা বট এর চারা মাথা তুলেছে |
নিশ্চিন্ত মনে ভাবলাম
দোকানটা তো এখনও খোলা আছে
এক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে ||
No comments:
Post a Comment